Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

লবণাক্তপ্রবণ অঞ্চলে চাষ উপযোগী চিনি ফসল

লবণাক্তপ্রবণ অঞ্চলে চাষ উপযোগী চিনি ফসল
ড. মো. আমজাদ হোসেন১ ড. গাজী মো. আকরাম হোসেন২

বাংলাদেশে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন হেক্টর সমুদ্র উপকূলীয় নিম্নভূমি রয়েছে যা সমুদ্র স্তরের ০.৯ থেকে ২.১ মিটার গভীরতার মধ্যে প্রায় ১.৫১ মিলিয়ন হেক্টর (৫৩%) লবণাক্ততা দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ২০% জুড়ে রয়েছে। এই অঞ্চল উপকূল থেকে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত   বিস্তৃত। এই অঞ্চলগুলোতে কৃষিজমি ব্যবহার খুবই কম, যা দেশের গড় কৃষি জমি ব্যবহারের প্রায় ৫০%। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জনসাধারণ তাদের জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অত্যধিক নির্ভরশীল। এই অঞ্চল ঘনবসতিপূর্ণ এবং বেশির ভাগ কৃষি পরিবার স্বল্প পরিমাণ জমিতে নিবিড়ভাবে চাষ করে, যার ফলে জমির উর্বরতা এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। বর্ষা ভেজা মৌসুম জুন থেকে অক্টোবর মাসে মাটি এবং নদীর লবণাক্ততা কম থাকে এবং তখন এই অঞ্চলে খরিপ ২ মৌসুমে ধান উৎপাদন সম্ভব হয়। তবে নভেম্বর হতে মে মাসের মধ্যে (রবি এবং খরিফ ১ মৌসুম) শুষ্ক মৌসুমে প্রতি বছর মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পায় এবং সেই সময়ে কৃষি উৎপাদন সীমিত হয়ে যায়। বাংলাদেশে শুকনো মৌসুমে খরা এবং মাটির লবণাক্ততা প্রতিকূলতার কারণে কৃষি উৎপাদন খুবই কঠিন। বিভিন্ন চিনিফসল যেমন আখ, তাল, খেজুর, গোলপাতা ইত্যাদি লবণাক্তসহিষ্ণু ফসল। লবণাক্তপ্রবণ অঞ্চলে অনায়াসেই এ সকল চিনি ফসলের চাষ বৃদ্ধি করে জনসাধারণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং চিনি ও গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। নিম্নে লবণাক্ততা সহিষ্ণু চিনি ফসলসমূহ সম্পর্কে সম্যক আলোচনা করা হলো।


আখ : আখ একটি অন্যতম খাদ্য তথা শিল্পজাত ফসল। এটিকে দুর্যোগ সহনশীল ফসল বলা হয়। যা খরা, বন্যা, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু। আখ ১৪ ডিএস/মিটার পর্যন্ত লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত লবণাক্ত এলাকায় চাষ উপযোগী গুড় আখের জাতগুলো হলো: ঈশ্বরদী ৩৯, ঈশ্বরদী ৪০, বিএসআরআই আখ ৪৩, বিএসআরআই আখ ৪৪, বিএসআরআই আখ ৪৫, বিএসআরআই আখ ৪৬ এবং বিএসআরআই আখ ৪৮। চর এলাকায় বন্যা ও জলাবদ্ধতা এবং উপকূলীয় দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় জলোচ্ছ্বাস বা জোয়ারের পানিতে যখন সব ধরনের ফসল ভেসে যায় তখনও আখ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। বিশেষ করে দুর্যোগের ২-৩ দিন খাদ্যের অভাবে যখন মহামারি হয় তখন আখের রস তৎক্ষণাৎ শক্তিদায়ক খাবার হিসেবে কাজ করতে পারে। কেননা আখের রস একটি পুষ্টিকর পানীয়। সাধারণত ১ গ্লাস আখের রস থেকে ২৭ কিলোক্যালরি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায়। আখের রসে মোট চিনির পরিমাণ ১৫ শতাংশ থাকে। রসের বাকি অংশ পানি যাহাতে প্রচুর ভিটামিন এবং মিনারেল দ্রবীভূত অবস্থায় থাকে। আখের রসে যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম, তামা, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম এবং জিংক বিদ্যমান। এতে আরও থাকে আয়রন এবং বিভিন্ন ভিটামিন যেমন এ, সি, বি১, বি২, বি৩, বি৫ এবং বি৬ এর সাথে উচ্চ ঘনমাত্রায় ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট (ক্লোরোফিলসহ), এন্টিঅক্সিডেন্টস, প্রোটিন, দ্রবীভূত আঁশ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সহায়ক যৌগ। সক্রিয়ভাবে কাজ করার মাধ্যমে এই পুষ্টি উপাদানসমূহ ব্যাপকভাবে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সহায়ক খাদ্য সরবরাহে ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা যায়, উক্ত খাদ্য উপাদানগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধে, ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে, ওজন হ্রাসে, জ্বর সারাতে, কিডনি পরিষ্কারে, দাঁতের ক্ষয় রোধে এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতায় ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।


খেজুর গাছ : খেজুর গাছ প্রকট খরা, বন্যা, লবণাক্ততা এবং জলাবদ্ধতায় বেঁচে থাকতে পারে। তাছাড়া ফসলের মাঠে কৃষি বনায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করে পতিত অনুর্বর জমিতে, বাঁধের ধারে, পুকুর পাড়ে, জমির আইলে, বাড়ি ও বাগানের চারদিকে, কাঁচা-পাকা রাস্তার দুই পাশে সারি করে খেজুর গাছ লাগানো হয়। প্রতিদিন খেজুরের রসের উৎপাদন গাছপ্রতি গড়ে ৫ লিটার। খেজুর রসে ১৫-২০% দ্রবীভূত শর্করা থাকে, প্রতি ১০ লিটার রসে এক কেজি গুড় হয়। একটা খেজুর গাছ থেকে বছরে প্রায় ২০-২৫ কেজি গুড় পাওয়া যায়। নভেম্বর মাস হতে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত রস পাওয়া যায়। খেজুর গাছ পরিবেশবান্ধব, স্থান সাশ্রয়ী একটি উদ্ভিদ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধেও খেজুর গাছের ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া খেজুর গাছ মাটির পানির স্তর ধরে রাখে। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় খেজুর গাছ লাগানো অত্যন্ত প্রয়োজন।


তালগাছ : তালগাছ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি সুগারক্রপ। তালগাছ প্রকট খরা, বন্যা, লবণাক্ততা এবং জলাবদ্ধতায় বেঁচে থাকতে পারে। তালপাতার আগা সুচালো হওয়ায় বজ্রপাত রোধক গাছ হিসেবে এ ফলের আবাদ অতি জনপ্রিয়। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশে অসময়ে প্রচুর বৃষ্টি ও বজ্রপাতের  প্রতিকূল প্রভাব অহরহ লক্ষ্য করা যায়। গত কয়েক বছর ধরে বজ্রপাতের আধিক্য অনেক বেড়ে যাওয়ায় বজ্রপাতের কারণে অনেক মানুষ ও অন্যান্য প্রাণিকূলের অকাল মৃত্যু ঘটেছে। বিশেষ করে উপকূল এবং হাওড় এলাকায় তালসহ অন্য বয়স্ক বড় গাছের (বট, পেকুড়, তেঁতুল) অনুপস্থিতির কারণে তদাঞ্চলে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। এ অবস্থার উন্নয়নে সারাদেশে তালগাছ সম্প্রসারণে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
গোলপাতা গাছ : গোলপাতা বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় ম্যানগ্রোভ প্রজাতির উদ্ভিদ। এটি সুন্দরবন ছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলের নদীখালের ধারে জন্মাতে দেখা যায়। বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, বাগেরহাট ও খুলনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় গোলপাতা গাছ দেখা যায়। গোলগাছের মঞ্জুরির দণ্ড হতে রস সংগ্রহ করা হয়। এই রসে শর্করার পরিমাণ প্রায় ১৮ ভাগ। যা গুড় তৈরিতে ও টনিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়াও রস হতে ভিনেগার তৈরি হয়। গোলের ব্যবহার এখন সারা বিশ্বে ক্রমে জনপ্রিয় হচ্ছে।


মাটির লবণাক্ততার কারণ ও প্রতিকার : মাটির লবণাক্ততা একটি মুখ্য পরিবেশগত প্রতিকূল অবস্থা যাহা ফসলের বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার মাধ্যমে ফলন কমিয়ে দেয়। সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCI)  মাটির একটি মুখ্য লবণ দূষক, ইহা একটি ক্ষুদ্র অনু যখন পানিতে আয়নিত হয় তখন সোডিয়াম (Na+) এবং ক্লোরিন (CI-1) আয়ন তৈরি করে। এই বিষাক্ত আয়নগুলো গাছের কোষীয় স্তরে আয়নিক এবং অসমোটিক স্ট্রেস সৃষ্টি করে। লবণ প্রভাবিত জমির উন্নয়নের জন্য অনেকগুলো কার্যকর উপায় রয়েছে যেমন- পানি চুয়ানো, রাসায়নিক প্রতিকার এবং ফাইটোরিমেডেশন। রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে লবণ- প্রভাবিত মাটির প্রতিকার করা যায়, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে জিপসাম (CaSO4.2H20), ক্যালসাইট (CaCO3), ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড (CaCI2.2H2O), এবং জৈবপদার্থ ব্যবহার (খামারজাত সার, সবুজসার, জৈব সংশোধন এবং পৌর শুষ্ক বর্জ্য ব্যবহার)। যেগুলো সফল পদ্ধতি এবং সারা বিশ্বে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং এই পদ্ধতিগুলো কার্যকরী, খরচ কম এবং সহজ। লবণাক্ত মাটিতে জিপসাম প্রয়োগ অথবা জিপসাম ও জৈব দ্রব্য একসাথে প্রয়োগের ফলে দানাশস্য এবং তেলবীজ ফসলের ফলন বৃদ্ধির যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। লবণাক্তপ্রবণ অঞ্চলে সুপারিশকৃত মাত্রায় রাসায়নিক সার ও সুপারিশকৃত মাত্রার ২৫% বেশি জিপসাম এবং জৈবসার (বিঘাপ্রতি ইউরিয়া-৫৮, টিএসপি-৩০, এমওপি-৩২, জিপসাম-২৩, দস্তা-২, বোরন-২, গোবর/কম্পোস্ট-১৫০০ কেজি)  প্রয়োগ করে আখ রোপণ করতে হবে এবং আখের জমিতে খড় বা আখের শুকনো পাতা দিয়ে ঢেকে দিলে জমির লবণাক্ততা রোধ করা যায় এবং ভাল ফলন পাওয়া যায়।


দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কথা বিবেচনা করে বর্তমান ও ভবিষ্যতে চিনি ও গুড়ের চাহিদা পূরণে আখসহ অন্যান্য সুগারক্রপ যেমন- খেজুর, তাল এবং গোলপাতা চাষ সম্প্রসারণে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ভ্যান ডাই (Van Die) ১৯৭৪ সালে বলেছেন সঠিক পরিচর্যা এবং উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রস আহরণ উপযোগী পাম প্রজাতিগুলো (খেজুর,  তাল, গোলপাতা ইত্যাদি) থেকে ২০ টন/হেক্টর/ বছর চিনি উৎপাদন সম্ভব। যেখানে আখ থেকে চিনি উৎপাদিত হয় মাত্র ৫ থেকে ১৫ টন/হেক্টর/বছর। খেজুর ও তালগাছ বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মাতে দেখা যায়। এ ফসলগুলোর চাষ সম্প্রসারণেরও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া সিডর-আইলা ও মহাসেন-এর মতো যে কোনো দুর্যোগে তাল এবং খেজুর গাছই সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে। তাছাড়া তালগাছ সবচেয়ে বেশি কার্বন গ্রহণ করে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে তাল গাছই সবচেয়ে বেশি সহায়তা প্রদান করতে পারে। আর গোলপাতা জন্মায় সবচেয়ে বেশি লবণাক্ত জমিতে বা নদী ও খালের পাড়ে, যেখানে জোয়ার-ভাটার কারণে লবণাক্ত পানি আসা-যাওয়া করে। অধিকাংশ সময় জমি পতিত থাকে। ফলে এ ফসলটি পতিত জমিতে চাষ করে। অথচ এ ফসলেরও রয়েছে অর্থনৈতিক অপার সম্ভাবনা। কারণ গোলগুড় স্বাদেও অনন্য, মানেও সেরা।

লেখক : ১মহাপরিচালক, বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঈশ^রদী, পাবনা। ২মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রধান, মৃত্তিকা ও পুষ্টি বিভাগ, বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঈশ্বরদী, পাবনা। ফোন : ০৭৩২৫৬৫৩৬২৮, ই-মেইল : dg-bsri.gov.bd


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon